‘পড়ে দেখেন, আশা করি ঠকবেন - TopicsExpress



          

‘পড়ে দেখেন, আশা করি ঠকবেন না!‘ ...বিবেকের দংশন... রাত তখন পাঁচটা । পদ্মার নীলজলের অতলে হঠাৎ একটি মাছের ঘুম ভেঙে গেল। কিছু অস্ফুট শব্দ শুনতে পেল মাছটি। মাছটির নাম রিলা। সে তার বোন নীলা এবং জুনিকাকে ডেকে তুলল। জুনিকা ঘুম ঘুম চোখে বলল, ‘কি হয়েছে আপু এত রাতে ঘুম ভেঙে দিলে কেন?’ নীলাও ঘুম ভেঙে যাওয়ার বিষন্নতা মুখে এনে রিলার দিকে তাকিয়ে আছে। ‘শুনছিস্ না দূর থেকে একটা অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে আসছে?’ঘুমের ঘোরে ছিল বলে এতক্ষণ কিছুই শুনেনি নীলা ও জুনিকা। এরপর তারা কান খাড়া করে শুনতে লাগল। কিছু হৈ-চৈ ছাড়া আর কিছু নয়, ভাবছিল নীলা ও রিলার অনুজ জুনিকা। নীলার মাথায় কিছু আসছিল না। রিলা একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘হয়ত বড় কোন বিপদ আসছে।’ কথাটি শেষহওয়ার সাথে সাথে বিশাল একটা বস্তু এসে তাদের ঝোপের উপর পড়ল। নদীর তলের স্বচ্ছজল ঘোলা হয়ে গেল। তিন বোন নীলা-রিলা ও জুনিকা তড়িৎবেগে অন্যদিকে সরে গেল। এসব কি দেখছে ওরা! কী বিভৎস! ডুবন্ত লঞ্চের ভেতরের যাত্রীদের দেহ মোছড় দিতে শুরু করেছে। কিছু কিছু লোকের দেহ ইতোমধ্যে নিস্তেজ হয়ে এসেছে। বাকিদেহগুলোরও নিস্তেজ হতে দেরি নেই। কী নিষ্ঠুর পরিণতি! জুনিকা বলল, ‘ওরা এমন করছে কেন আপু?’ এটা কি নতুন কোন খেলা? লাফালাফি তারপর চুপ করে শুয়ে থাকা! ওয়াও, খুব ইন্টারেস্টিং। চল না আপু আমারও এই খেলাটা খেলি।’ রিলা ধমক দিয়ে জুনিকাকে থামিয়ে দিল। রিলা এই তিন বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমতি। কেবল রিলাই জানে লঞ্চের যাত্রীদের জীবনে আসলে কী ঘটছে। মরণ নামক এক দানব এসে ঐ মানুষগুলোর জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিচ্ছে এক এক করে। কিছুসময় গত হল; তারপর চারদিকে নিস্তব্ধতা নেমে এল। তিনটি মাছ নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ‘পিনাক-৬’নামক ডুবন্ত লঞ্চটির দিকে। রিলা চলতে শুরু করল । লেজ নাড়াতে নাড়াতে সে ‘পিনাক-৬’- এ প্রবেশ করল। তার সাথে নীলা ও জুনিকাও প্রবেশ করল লঞ্চটির অভ্যন্তরে। কী দেখছে এসব? সব ভয়ঙ্কর দৃশ্য! নিস্তেজ হওয়া যাত্রীদের পেট বিষমভাবে ফুলে উঠেছে। কারো কারো নাক-মুখ দিয়ে ফেনা গড়িয়ে পড়ছে। একটা কেবিনে গিয়ে দেখতে পেল এক মহিলা তার নবজাতক বুকে নিয়ে কুঁকড়ে আছে। লাশের বুকে অগণিত ব্যাথ্যা বুকে নিয়ে শুয়ে আছে আরেকটি লাশ। মা-বাবাহীন তিনটি মাছ। তাদের মা-বাবা মানুষের জালে আটকা পড়ে লাশ হয়েছে।পরে হয়ত মানুষের লাঞ্চ বা ডিনার সুস্বাদু ডিনারও হয়েছিল তারা। মা-বাবাকে হারিয়ে রিলা কত যে অশ্রু ঝরিয়েছে তার কোন হিসেব নেই। জুনিকা তখন খুবই ছোট ছিল। কেবল একটু একটু সাঁতার কাটতে শিখছিল সে। মা-বাবার মৃত্যুতে নীলাও প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছিল মা-বাবার মৃত্যুতে।তখন থেকে নীলা কেমন যেন হয়ে গেল। সবসময় মনমরা-বিষন্ন হয়ে পড়ে থাকে সে। কারো সাথে তেমন মিশতে চায় না। মানসিক আঘাত শারীরিক আঘাতের চেয়ে বহুগুণ কষ্টদায়ী। পিতামাতাহারা এইমাছগুলি তাদের শত্রুদের লাশদেখে ভীত হয়ে পড়েছে। মৃত্যুটা এমন একটি বিভৎস ঘটনা যা চরম শত্রুর ক্ষেত্রেও সহমর্র্মিতা সৃষ্টি করে। রিলা ইতোমধ্যে কান্না জুড়ে দিয়েছে। নীলাও কাঁদছে। বড় আপুদের কান্না দেখে জুনিকার চোখের জলও আর স্থির থাকতে পারল না। কান্না-বিষয়টা সংক্রামক। কাছের কাউকে কাঁদতে দেখলে নিজেরও কান্না চলে আসে। তিনটি মাছ কাঁদছে। ওদিকে নদীর পাড়ে কাঁদছে তিনশ পরিবার। শোকে পুরো দেশজুড়ে নেমে এসেছে কালছায়া। নীলা-রীলা-জুনিকা সবকিছু লঞ্চের সব জায়গা অবলোকন করছে। কোথাও মোবাইল, কোথাও টাকাপয়সা , কোথাও মুড়িমুড়কি আবার কোথাও মেহেদী রাঙা হাত নিরব-নিস্তব হয়ে আছে। যেখানে জীবের অস্তিত্ব ধ্বংস হতে শুরু হয়, সেখানে জড়পদার্থগুলো আরো বেশি জড় হয়ে উঠে। মহামারীতে নির্জীব হওয়া এলাকায় বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দ খুব একটা হয় না। যেন শোনার কেউ নেই তাই শব্দও হচ্ছে না। ডুবে যাওয়া লঞ্চে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়-ছাত্রের স্মার্টফোন-স্ক্রীণে ভাসছে একটি লিখা, ‘চলে যাচ্ছি অজানার পথে...’ দশদিন ধরে এসব দৃশ্য দেখছিল নীলা-রীলা-জুনিকা। মরে যাওয়া মানুষগুলো নড়তে শুরু করেছে। তাদের শরীরে পচন ধরেছে। বিভিন্ন মাছেরা এসে খুবলে খুবলে খাচ্ছে ‘পিনাক-৬’ এর ভাগ্যবিড়ম্বিত যাত্রীদের মৃতদেহ। জীবন শেষ হয়ে যাওয়া সেসব যাত্রীদের লাশও অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। মাদারীপুরের আলী আহমদ নামের যে কলেজ ছাত্র লঞ্চটিতে উঠেছিল তার কিছু মাংস এখন বড় একটা মাছের পেটে। অন্যসব গন্ধময় নিস্তব্ধদেহও লুটেপুটে খাচ্ছে অন্যান্য মাছেরা। মানুষের খাদ্য মাছ, মাছের খাদ্য মানুষ। নাটোরের ছোট একটা গ্রামের সেই তরুণ কবিও ছিল ‘পিনাক-৬’য়ে। তাঁর পরিহিত নীল রঙের শার্টটির পকেটে রাখা সদ্য লিখা কবিতা ‘বিবেকের দংশন’ পদ্মার অথৈ জলের অতলে ডুবে আছে। লঞ্চটি যেদিন ডুবছিল সেদিন ছিল তার কবিতা উৎসবে অংশগ্রহণ করার দিন। প্রিয় মানুষগুলোকে কবিতাটি শোনাতে না পারার বেদনা ও আক্ষেপ নিয়ে কবি চলে গেল পরকালে। সেসব করুণ দৃশ্য আবেক্ষণ করছিল তিনটি মাছ, নীলা-রিলা-জুনিকা। কিছুদিন পরপর সেই দৃশ্য আবারও দেখা যায় পদ্মার অতলে। Writer:- Sadman Sakil (সমীর শিকাদার)
Posted on: Tue, 12 Aug 2014 09:30:01 +0000

Trending Topics



adma Silva isso te lembra algo ? kkkVocê conhece alguém

Recently Viewed Topics




© 2015